আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দু’জন মহিলা ছিল। তাদের সাথে দু’টি সন্তানও ছিল। হঠাৎ একটি বাঘ এসে তাদের একজনের ছেলে নিয়ে গেল। সঙ্গের একজন মহিলা বললো, ‘‘তোমার ছেলেটিই বাঘে নিয়ে গেছে।’’ অন্য মহিলাটি বললো, ‘‘না, বাঘে তোমার ছেলেটি নিয়ে গেছে।’’ অতঃপর উভয় মহিলাই দাঊদ (আঃ)-এর নিকট এ বিরোধ মীমাংসার জন্য বিচারপ্রার্থী হলো। তখন তিনি ছেলেটির বিষয়ে বয়স্কা মহিলাটির পক্ষে রায় দিলেন। অতঃপর তারা উভয়ে বেরিয়ে দাউদ (আঃ)-এর পুত্র সুলায়মান (আঃ)-এর নিকট দিয়ে যেতে লাগল এবং তারা দু’জনে তাঁকে ব্যাপারটি জানালেন। তখন তিনি লোকদেরকে বললেন, তোমরা আমার নিকট একখানা ছোরা নিয়ে আস। আমি ছেলেটিকে দু’ টুক্রা করে তাদের দু’জনের মধ্যে ভাগ করে দেই। এ কথা শুনে অল্প বয়স্কা মহিলাটি বলে উঠলো, তা করবেন না, আল্লাহ্ আপনার উপর রহম করুন। ছেলেটি তারই। তখন তিনি ছেলেটি সম্পর্কে অল্প বয়স্কা মহিলাটির অনুকূলে রায় দিলেন।

সুলায়মান (আঃ)-এর হিকমতপূর্ণ বিচার

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বানী ইসরাঈলের মাঝে এমন এক ব্যক্তি ছিল যে, নিরানব্বইটি মানুষ হত্যা করেছিল। অতঃপর বের হয়ে একজন পাদরীকে জিজ্ঞেস করল, আমার তাওবাহ কবুল হবার আশা আছে কি? পাদরী বলল, না। তখন সে পাদরীকেও হত্যা করল। অতঃপর পুনরায় সে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল। তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সে রওয়ানা হল এবং পথিমধ্যে তার মৃত্যু এসে গেল। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমত ও আযাবের ফেরেশতামন্ডলী তার রূহকে নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হলেন। আল্লাহ্ সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও। এবং পশ্চাতে ফেলে আসা স্থানকে (যেখানে হত্যাকান্ড ঘটেছিল) আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর ফেরেশতাদের উভয় দলকে নির্দেশ দিলেন— তোমরা এখান থেকে উভয় দিকের দূরত্ব পরিমাপ কর। পরিমাপ করা হল, দেখা গেল যে, মৃত লোকটি সামনের দিকে এক বিঘত বেশি এগিয়ে আছে। কাজেই তাকে ক্ষমা করা হল।

উৎসঃ সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৭০, অধ্যায়ঃ ৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আঃ), তাওহীদ পাবলিকেশন

একজন খুনীর তওবাহ ও জান্নাত লাভ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক লোক অপর লোক হতে একখন্ড জমি ক্রয় করেছিল। ক্রেতা খরিদকৃত জমিতে একটা স্বর্ণ ভর্তি ঘড়া পেল। ক্রেতা বিক্রেতাকে তা ফেরত নিতে অনুরোধ করে বলল, কারণ আমি জমি ক্রয় করেছি, স্বর্ণ ক্রয় করিনি। বিক্রেতা বলল, আমি জমি এবং এতে যা কিছু আছে সবই বেচে দিয়েছি। অতঃপর তারা উভয়েই অপর এক লোকের কাছে এর মীমাংসা চাইল। তিনি বললেন, তোমাদের কি ছেলে-মেয়ে আছে? একজন বলল, আমার একটি ছেলে আছে। অন্য লোকটি বলল, আমার একটি মেয়ে আছে। মীমাংসাকারী বললেন, তোমার মেয়েকে তার ছেলের সঙ্গে বিবাহ দাও আর প্রাপ্ত স্বর্ণের মধ্যে কিছু তাদের বিবাহে ব্যয় কর এবং বাকী অংশ তাদেরকে দিয়ে দাও।

উৎসঃ সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৭২, অধ্যায়ঃ ৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আঃ), তাওহীদ পাবলিকেশন

সোনাভর্তি কলস

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলের কোন এক ব্যক্তি বনী ইসরাঈলের অপর এক ব্যক্তির নিকট এক হাজার দ্বীনার ঋণ চাইল। তখন সে (ঋণদাতা) বলল, কয়েকজন সাক্ষী আন, আমি তাদেরকে সাক্ষী রাখব। সে বলল, সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। তারপর (ঋণদাতা) বলল, তা হলে একজন যামিনদার উপস্থিত কর। সে বলল, যামিনদার হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। ঋণদাতা বলল, তুমি সত্যই বলেছ। এরপর নির্ধারিত সময়ে পরিশোধের শর্তে তাকে এক হাজার দ্বীনার দিয়ে দিল। তারপর ঋণ গ্রহীতা সামুদ্রিক সফর করল এবং তার প্রয়োজন সমাধা করে সে যানবাহন খুঁজতে লাগল, যাতে সে নির্ধারিত সময়ের ভেতর ঋণদাতার কাছে এসে পৌঁছতে পারে। কিন্তু সে কোন যানবাহন পেল না। তখন সে এক টুকরো কাঠ নিয়ে তা ছিদ্র করল এবং ঋণদাতার নামে একখানা পত্র ও এক হাজার দ্বীনার তার মধ্যে ভরে ছিদ্রটি বন্ধ করে সমুদ্র তীরে এসে বলল, হে আল্লাহ! তুমি তো জান আমি অমুকের নিকট এক হাজার দ্বীনার ঋণ চাইলে সে আমার কাছে যামিনদার চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আল্লাহই যামিন হিসাবে যথেষ্ট। এতে সে রাজী হয়। তারপর সে আমার কাছে সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট, তাতে সে রাজী হয়ে যায়। আমি তার ঋণ (যথাসময়ে) পরিশোধের উদ্দেশে যানবাহনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। তাই আমি তোমার নিকট সোপর্দ করলাম, এই বলে সে কাষ্ঠখন্ডটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করল। আর কাষ্ঠখন্ডটি সমুদ্রে প্রবেশ করল। অতঃপর লোকটি ফিরে গেল এবং নিজের শহরে যাওয়ার জন্য যানবাহন খুঁজতে লাগল। ওদিকে ঋণদাতা এই আশায় সমুদ্রতীরে গেল যে, হয়ত বা ঋণগ্রহীতা কোন নৌযানে করে তার মাল নিয়ে এসেছে। তার দৃষ্টি কাষ্ঠখন্ডটির উপর পড়ল, যার ভিতরে মাল ছিল। সে কাষ্ঠখটি তার পরিবারের জ্বালানীর জন্য বাড়ী নিয়ে গেল। যখন সে তা চিরল, তখন সে মাল ও পত্রটি পেয়ে গেল। কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাজার দ্বীনার নিয়ে এসে হাযির হল এবং বলল, আল্লাহর কসম! আমি আপনার মাল যথাসময়ে পৌঁছিয়ে দেয়ার উদ্দেশে সব সময় যানবাহনের খোঁজে ছিলাম। কিন্তু আমি যে নৌযানে এখন আসলাম, তার আগে আর কোন নৌযান পাইনি। ঋণদাতা বলল, তুমি কি আমার নিকট কিছু পাঠিয়েছিলে? ঋণগ্রহীতা বলল, আমি তো তোমাকে বললামই যে, এর আগে আর কোন নৌযান আমি পাইনি। সে বলল, তুমি কাঠের টুকরোর ভিতরে যা পাঠিয়েছিলে, তা আল্লাহ তোমার পক্ষ হতে আমাকে আদায় করে দিয়েছেন। তখন সে আনন্দচিত্তে এক হাজার দ্বীনার নিয়ে ফিরে চলে এল।

উৎসঃ সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বরঃ ২২৯১, অধ্যায়ঃ ৩৯/ যামিন হওয়া, তাওহীদ পাবলিকেশন

এক হাজার দ্বীনার ঋণ ও আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুলের এক অনন্য দৃষ্টান্ত

মালিক ইবনে দিনার (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন একজন ধার্মিক এবং (আল্লাহর প্রতি) অনুগত ইমাম। কেউ একথা কল্পনাও করতে পারে না যে, এক সময় তিনি খুব রূঢ় ও অবাধ্য মানুষ ছিলেন। তাঁর তওবা করার গল্পটি আমাদের দেখায় যে, কোনো মানুষ – সে যতো খারাপই হোক না কেন - আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার অযোগ্য নয়।

ইবনে দিনার ছিলেন খুব অত্যাচারী লোক। কেননা তিনি ছিলেন নীতিহীন ও মাতাল। এমনকি তিনি সুদের ব্যবসাও করতেন, যার কারণে লোকজন তাকে ঘৃণা করতো ও এড়িয়ে চলতো। তার একটি ছোট মেয়ে ছিলো যাকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। মাত্র তিন বছর বয়সে যখন তার মেয়ের মৃত্যু হয়, তিনি উন্মত্তপ্রায় এবং শোকে কাতর হয়ে পড়েন, আর মদপান করতে থাকেন যতক্ষণ না তার হুঁশ চলে যায়।

এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, তিনি কিয়ামত প্রত্যক্ষ করছেন এবং একটি ভয়ঙ্কর সাপ তাকে ছোবল মারছে। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ইবনে দিনার যখন পালানোর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না, একজন বৃদ্ধ লোক ছাড়া তিনি আর কাউকেই দেখলেন না এবং তার দিকে ছুটতে লাগলেন। তাকে সাহায্য করার পক্ষে লোকটি ছিলো খুবই দুর্বল, তবে তিনি ইবনে দিনারকে অন্য একটি পথের দিকে নির্দেশ করলেন। আর ইবনে দিনার ঠিক ততক্ষণ দৌড়াতে থাকলেন যতক্ষণ না তিনি নিজেকে জাহান্নামের কিনারায় আবিষ্কার করলেন।

ভীতসন্ত্রস্ত ইবনে দিনার পুনরায় বৃদ্ধ লোকটির কাছে ছুটে গেলেন এবং তাকে উদ্ধার করার জন্য অনুরোধ করলেন। কাঁদতে কাঁদতে বৃদ্ধ লোকটি তাকে বললো, “দেখতেই পাচ্ছো আমি দুর্বল। আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো না।” তারপর তিনি ইবনে দিনারকে আরেক দিকে ছুটতে বললেন, আর ইবনে দিনার তা-ই করলেন। তিনি যখন ছুটছিলেন তখন দেখলেন সাপটি তার খুব নিকটবর্তী এবং তাকে প্রায় ধরেই ফেলেছিলো। হঠাৎ তিনি দেখলেন তার ছোট মেয়ে তাকে সাপের হাত থেকে বাঁচাতে এসেছে।

মালিক ইবনে দিনারের ভয়ঙ্কর স্বপ্ন

ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একবার তিনজন লোক পথ চলছিল, তারা বৃষ্টিতে আক্রান্ত হল। অতঃপর তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। হঠাৎ পাহাড় থেকে এক খণ্ড পাথর পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা একে অপরকে বলল, নিজেদের কৃত কিছু সৎকাজের কথা ছিন্তা করে বের করো, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়েছে এবং তার ওয়াসীলা করে আল্লাহর নিকট দু’আ করো। তাহলে হয়ত আল্লাহ তোমাদের উপর থেকে পাথরটি সরিয়ে দিবেন।

তাদের একজন বলতে লাগলো, হে আল্লাহ! আমার আব্বা-আম্মা খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট সন্তানও ছিলো। আমি তাদের ভরণ-পোষণের জন্য পশু পালন করতাম। সন্ধায় যখন আমি বাড়ি ফিরতাম তখন দুধ দহন করতাম এবং আমার সন্তানদের আগে আমার আব্বা-আম্মাকে পান করাতাম। একদিন আমার ফিরতে দেরী হয় এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে আসতে পারলাম না। এসে দেখি তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখন আমি দুধ দোহন করলাম, যেমন প্রতিদিন দোহন করি। তারপর আমি তাঁদের শিয়রে (দুধ নিয়ে) দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে জাগানো আমি পছন্দ করিনি এবং তাঁদের আগে আমার বাচ্চাঁদেরকে পান করানোও অসঙ্গত মনে করি। অথচ বাচ্চাগুলো আমার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করছিলো। এভাবে ভোর হল। হে আল্লাহ, আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটি করে থাকি তবে আপনি আমাদের থেকে পাথরটা খানিক সরিয়ে দিন, যাতে আমরা আসমানটা দেখতে পাই। তখন আল্লাহ পাথরটাকে একটু সরিয়ে দিলেন এবং তারা আসমান দেখতে পেলো।

পাহাড়ের গুহায় আঁটকে পড়া তিন যুবক

মুহাম্মাদ বিন ওবায়দুল্লাহ্‌ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা দ্বিতীয় খলীফা ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর নিকটে কিছু কাপড় আসলে তিনি সেগুলি হকদারগণের মাঝে বণ্টন করে দেন। এতে আমাদের প্রত্যেকে একটি করে কাপড় পেলাম। কিন্তু তিনি নিজে দুটি কাপড় দিয়ে তৈরী একটি পোশাক পরিধান করে খুতবা দিতে মিম্বরে  আরোহণ করলেন। শ্রোতাদের অন্যমনস্কতা লক্ষ্য করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে লোকসকল! তোমরা কি আমার কথা শ্রবণ করছ না? এমতাবস্থায় বিখ্যাত সাহাবী সালমান ফারিসী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, জি না, আমরা শ্রবণ করব না। ওমর (রাঃ) বললেন, কেন হে আবু আব্দুল্লাহ্‌? তিনি বললেন, আপনি আমাদেরকে একটি করে কাপড় দিয়েছেন। অথচ আপনি পরিধান করেছেন (দুই কাপড়ের) বড় পোশাক! ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ব্যস্ত হয়ো না হে আবু আব্দুল্লাহ্‌! অতঃপর তিনি ছেলে আব্দুলাহ বিন ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর  দিকে ইশারা করলে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি  আল্লাহ্‌র কসম  করে জিজ্ঞেস করছি, আমার পোশাকে যে অতিরিক্ত কাপড় রয়েছে, সেটা কি তোমার নয়? আব্দুল্লাহ্‌ বিন ওমর  (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, জি, আমার। অতঃপর সালমান ফারিসী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, এখন আপনি বক্তব্য শুরু করুন, আমরা শ্রবণ করব।

রাষ্ট্রপ্রধানের জবাবদিহিতা

সুহাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্ব যুগে একজন বাদশাহ ছিল এবং তাঁর (উপদেষ্টা) এক জাদুকর ছিল। জাদুকর বার্ধক্যে উপনীত হলে বাদশাহকে বলল যে, ‘আমি বৃদ্ধ হয়ে গেলাম তাই আপনি আমার নিকট একটি বালক পাঠিয়ে দিন, যাতে আমি তাকে জাদু-বিদ্যা শিক্ষা দিতে পারি।’ ফলে বাদশাহ তার কাছে একটি বালক পাঠাতে আরম্ভ করল, যাকে সে জাদু শিক্ষা দিত। তার যাতায়াত পথে এক পাদ্রী বাস করত। যখনই বালকটি জাদুকরের কাছে যেত, তখনই পাদ্রীর নিকটে কিছুক্ষণের জন্য বসত, তাঁর কথা বালকটির ভালো লাগত। ফলে সে যখনই জাদুকরের নিকট যেত, তখনই যাওয়ার সময় সে পাদ্রীর কাছে বসত। যখন সে পাদ্রীর কাছে আসত জাদুকর তাকে (তার বিলম্বের কারণে) মারত। ফলে সে পাদ্রীর নিকটে এর অভিযোগ করল। পাদ্রী বলল, ‘যখন তোমার ভয় হবে যে, জাদুকর তোমাকে মারধর করবে, তখন তুমি বলবে, আমার বাড়ির লোক আমাকে (কোনো কাজে) আটকে দিয়েছিল। আর যখন বাড়ির লোকে মারবে বলে আশঙ্কা হবে, তখন তুমি বলবে যে, জাদুকর আমাকে (কোনো কাজে) আটকে দিয়েছিল।’

সুতরাং সে এভাবেই দিনাতিপাত করতে থাকল। একদিন বালকটি তার চলার পথে একটি বিরাট (হিংস্র) জন্তু দেখতে পেল। ঐ (জন্তু)টি লোকের পথ অবরোধ করে রেখেছিল। বালকটি (মনে মনে) বলল, ‘আজ আমি জানতে পারব যে, জাদুকর শ্রেষ্ঠ না পাদ্রী?’ অতঃপর সে একটি পাথর নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ! যদি পাদ্রীর বিষয়টি তোমার নিকটে জাদুকরের বিষয় থেকে পছন্দনীয় হয়, তাহলে তুমি এই পাথর দ্বারা এই জন্তুটিকে মেরে ফেল। যাতে (রাস্তা নিরাপদ হয়) এবং লোকেরা চলাফেরা করতে পারে।’ (এই দু‘আ করে) সে জন্তুটাকে পাথর ছুঁড়ল এবং তাকে হত্যা করে দিল। এরপর লোকেরা চলাফেরা করতে লাগল। বালকটি পাদ্রীর নিকটে এসে ঘটনাটি বর্ণনা করল। পাদ্রী তাকে বলল, ‘বৎস! তুমি আজ আমার চেয়ে উত্তম। তোমার (ঈমান ও একীনের) ব্যাপার দেখে আমি অনুভব করছি যে, শীঘ্রই তোমাকে পরীক্ষায় ফেলা হবে। সুতরাং যখন তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তখন তুমি আমার রহস্য প্রকাশ করে দিও না।’

এক মুশরিক রাজা, মুসলিম বালক ও সবর (ধৈর্য)

+